# একটি অপ্রত্যাশিত উপহার
#দেবলীনা ভট্টাচার্য
                                 
                       'এক'
বৃষ্টি তখন মুষলধারেই পড়ছিল,সেই সাথে ঝোড়ো হাওয়া আর বিদ্যুতের ঝলকানি এই দুইয়ের সমন্বয় সমগ্র পরিবেশটাকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছিল।
                       'দুই'
রাত তখন বারোটা বেজে এক মিনিট,হঠাৎ করে  পিয়ানের ফোনে একটা ম্যাসেজ ঢুকল। পিয়ান ফোনটা নিয়ে দেখল অচেনা নম্বর থেকে কেউ একটা এস এম এস করেছে। মেসেজটা পড়ার আগে 10 ডিজিটের নম্বরটার দিকে বারবার তাকিয়ে পিয়ান সেন্ডার এর নাম ভাবার চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করল।
                   'তিন '
পিয়ান হল অনিল বোস ও জয়া বোসের একমাত্র ছেলে।  তার বাবা পেশায় ডাক্তার যাকে বলে সল্টলেকের নামকরা নিউরলাজিস্ট আর মা কোন এক প্রাইভেট কলেজের প্রফেসর। ছোটবেলা থেকেই বিলাসিতা পিয়ান এর সঙ্গী। দামি জামা,দামি ফোন,দামি জুতো বা রিস্টওয়াচ কিছুরই অভাব ছিল না তার,তবুও যেন সে ভীষণ গরিব।  মা-বাবা দুজনেই খুব ব্যস্ত  তাই ছোট্ট পিয়ান এর স্কুল এর গল্প বা তার ছোট ছোট ইচ্ছেগুলোর কথা শোনার মতো সময় তাদের দামি ঘড়িতে থাকেনা।
                         
                     'চার '
পিয়ান সল্টলেকের একটা নামকরা স্কুলে পড়াশোনা করে।  ছেলের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে মিস্টার বোস তাকে সুইমিং ক্লাসেও ভর্তি করেছেন। তবে পিয়ান এর জন্য তার বাবা মায়ের দায়িত্ব শুধু এইটুকুই-নামকরা স্কুল,বেস্ট টিউটর আর নামীদামি সুইমিং ক্লাবের মেম্বারশিপ নেওয়া।

 পিয়ান তো কখনও তার বাবার হাত ধরে স্কুলেই যায়নি, তার মা-তো কখনও তাকে ভালোবেসে খাইয়েও দেয়নি। প্রত্যেক জায়গার মান্থলি ফিজ্ টাও বাড়ির ড্রাইভার এর হাত দিয়েই পাঠিয়ে দেন মিস্টার বোস।

                     'পাঁচ '
প্রতিবছর জন্মদিনে পিয়ান এর ঘর দামি দামি খেলনা,পোশাক আশাক আর সুস্বাদু খাবারে ভরে গেলেও তার মনের কোণের ফাঁকা জায়গাটা কেউ একটু ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেয়না। বছরের ঐ একটা দিন পিয়ান অধীর আগ্রহে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে আর মনে মনে ভাবে এবারে নিশ্চই তার বাবা-মা তাকে সারপ্রাইজ দিতে রাত বারোটার পর তাকে উইজ্ করতে আসবে। কিন্তু তা কখনোই হয়না, বাবা-মায়ের মুখ থেকে হ্যাপি বার্থডে কথা শোনাটা পিয়ান এর কাছে স্বপ্নের মতো।

                      'ছয়'
কাল পিয়ান এর জন্মদিন, কালকে সে চোদ্দ বছরে পা দেবে তাই আজও সে তার শোবার ঘরের দেয়ালে টাঙানো কাচের টাইটানিক ঘড়িটার দিকে চেয়ে বসে আছে।  কিন্তু এতো রাতে কে তাকে এস এম এস করতে পারে! তার প্রায় সব বন্ধুদেরই তো ফোন নম্বর সেভ করা আছে। তাহলে কি মা-বাবা নতুন সিম্ নিয়ে পাশের ঘর থেকে ম্যাসেজ করেছে তাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য! এইসব ভাবতে ভাবতে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে সে ম্যাসেজটা খুলল, দেখল তাতে লেখা আছে-

 স্নেহের পিয়ানবাবু,

এই কয়েক মাস হলো আমি তোমাকে চিনি আর এই কয়েক দিনেই তুমি আমাকে তোমার বন্ধু বানিয়েছো কত গল্প করেছ তোমার মা-বাবার গল্প বলেছ।জানো আমি পড়াশোনা অল্প কিছু জানলেও আরো বেশি কিছু তোমার থেকেই শেখা।মোবাইল এর ব্যবহার আর তাতে টাইপ করা তো অধিকাংশ তোমার কাছ থেকেই শেখা,আর হয়তো তাই আজ লিখতে পারলাম।
শুভ জন্মদিন পিয়ান বাবু ।খুব ভালো থেকো,আরো বড় হও।ঈশ্বরের কাছে  প্রার্থনা করি তিনি যেন তোমায় অনেক আশীর্বাদ করেন।
                               ---- ইতি
             তোমার আনোয়ার কাকু
এস এম এস টা পরে আনন্দে পিয়ান এর চোখে জল চলে এল।তার মনের ইচ্ছাটার কথা তার উচ্চ  শিক্ষায় শিক্ষিত বাবা-মা এতদিনেও জানতে পারলো  না আর  সেটা এই কয়েক মাসে অল্প শিক্ষিত ড্রাইভার  আনোয়ার কাকু এত সহজেই বুঝে গেল।

মোবাইল টা বন্ধ করে সে বিছানা তে চলে এল।কাল সকালেই তো  কাকু কে সবার আগে থ্যাংকস জানাতে হবে!

0 Comments