মাইগ্রেনঃ লক্ষণ,কারণ ও প্রতিকার

মাথাব্যথা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে এক প্রকারের মাথাব্যথা হলো ‘‘মাইগ্রেন’’। মাথা ব্যথা সমস্যা তথা মাইগ্রেন ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের চেয়ে মাইগ্রেনের সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন নারীরা ।গ্রামে যা সাধারণভাবে “আধ কপালি ব্যথা” নামে পরিচিত। বস্তুত আজ থেকে পনের/বিশ বছর পূর্বে এই রোগের তেমন একটা প্রাদুর্ভাব ছিল না। কিন্তু সময়ের কালস্রোতে প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সাথে এর ব্যাপকতাও ভীষণভাবে প্রসারিত হয়েছে। ঢাকা শহরের মতো জনবহুল, ধুলাবালি ও ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশের ন্যায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে মূলত এর প্রকোপ একটু বেশি লক্ষণীয়। যা হোক, এই মাইগ্রেন রোগটি বর্তমানে ধীরে ধীরে এতো বেশি বিস্তৃতি লাভ করেছে যে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এর রূপ আরো ভয়াবহ হতে পারে। সুতরাং এর নানাবিধ দিকগুলো ও প্রতিকার সম্পর্কে এবং সর্বোপরি এই রোগের বিষয়ে বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যেসব  চিন্তা-ভাবনা করছেন তার উপর বিশদ ধারণা আমাদের জানা প্রয়োজন।

মাইগ্রেনের কারণঃ

বাস্তবিকপক্ষে মাথাব্যথার প্রকৃত কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আজও কোনো স্থির সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। বিজ্ঞানীরা ১৯৬০ সালে মাথাধরা সম্পর্কিত এক গবেষণায় জানান, টেনশনের কারণে অনেক সময় মাথাব্যথা হয় এবং তার চিকিৎসাও সহজ।
রক্তবাহী শিরাগুলো যখন মস্তিস্কে ঠিকমতো রক্ত সরবরাহ করে না, তখন সেটাকে অনেকে মাইগ্রেনের ব্যথা হিসেবে চিহ্নিত করেন। টেনশন বা অন্য কারণেও এটা হতে পারে। তাছাড়া রক্তবাহী শিরাগুলো কখনও কোনো কারণে অতিরিক্ত রক্ত সরবরাহকরলে মাথাব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা মাইগ্রেনের ব্যথার চেয়ে তীব্র; তবে তা মাইগ্রেনের ব্যথার সাথে বুঝতে ভুল হতে পারে।
ধারণা করা হয়, টেনশন বা প্রাকৃতিক কারণ থেকে সৃষ্ট মাইগ্রেনের ব্যথা উঠার প্রারম্ভে মস্তিস্কে রক্ত সরবরাহ কমে যায়- যার কিছুটা প্রভাব পড়ে অক্সিপিটাল এবং প্যারাইটাল নামক মস্তিস্কের দুটি অংশের কার্যকারিতার উপর। ফলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ মাথাব্যথার সৃষ্টি হতে শুরু করে। আবার যখন পুরোপুরিভাবে মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়, তখন বহিঃমস্তিস্কের ধমনীগুলোর প্রসারণ ঘটে- যা মূলত রক্তের মাঝে বিদ্যমান ৫-হাইড্রেক্সি ট্রিপটামিন নামক ব্রেনের উপাদানের উপস্থিতির পরিমাণের উপর নির্ভর করে। তবে এই উপাদানটির সঠিক ভূমিকা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো সন্দীহান। বর্তমানে আমেরিকার অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অফ হেডঅ্যাক (Association For the Study of Headache)- মাথাব্যথা তথা মাইগ্রেনের সঠিক কারণ ও প্রতিকার খুঁজে বের করার লে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রধান কারণঃ

ক) বংশগত প্রভাব : অন্যান্য ব্যথার তুলনায় মাইগ্রেনের ব্যথার উপর বংশগত প্রভাব বেশি- যা মূলত কোষের একক ‘‘জীন’’এর বৈশিষ্টের উপর নির্ভর করে। প্রমাণ স্বরূপ, নেদারল্যান্ডের লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির একদল নিউরোলজিস্ট একজন মাইগ্রেন রোগীর দেহ থেকে মাইগ্রেনের সাথে সংশিষ্ট জীন পৃথক করেন। পরবর্তীতে ঐ রোগীর মাইগ্রেনের ব্যথা আর দেখা যায়নি। সেই গবেষক দলের নেতা ডা: মাইকেল ফেরি ১০টি পরিবারের ৬০ জন সদস্যের উপর গবেষণা চালিয়ে একই তথ্য প্রকাশ করেন।
খ) টেনশন/ দুশ্চিন্তা/ অস্থিরতা : যারা সবসময় ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে চিন্তাগ্রস্থ থাকেন বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাদের মাঝে এর প্রকোপ বেশি। তাছাড়া হঠাৎ করে কোনো বিপদজনক খবর বা আবেগপ্রবণ অবস্থা এই মাইগ্রেনের জন্ম দেয়।
গ) জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং কিছু যৌন হরমোন : গবেষকদের মতে মাথাব্যথার সাথে নির্দিষ্ট কিছু যৌন হরমোনের সংযোগ রয়েছে। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা বেশি। অপরদিকে মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের একদল গবেষক ১০০ জন মহিলার উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, যাদের নিয়মিত মাসিক হয় না- তাদের এই মাইগ্রেনের হার বেশি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মাসিকের পূর্বাবস্থায় এই মাইগ্রেনের ব্যথা উঠতে পারে। অন্যদিকে যেসব মহিলারা দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করেন তাদের মাঝেও এই রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
ঘ) পরিবেশের প্রভাব : বর্তমানে আমাদের দেশসহ বিশ্বের বড় বড় শহরগুলোতে ক্রমাগত জনসংখ্যার বৃদ্ধি পরিবেশকে অসহনীয় করে তুলছে। এরই মাঝে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন কর্তৃক বর্জ্য পদার্থ ও ধোঁয়া পরিবেশকে এমন এক অবস্থায় এনেছে যার প্রভাব আমাদের শরীরের উপর পড়েছে। আর এমনি এক প্রভাবের কারণ হিসাবে সৃষ্টি হয়েছে মাইগ্রেন। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গ্রাম অঞ্চলের লোকদের চেয়ে শহর অঞ্চলের লোকদের মাঝে এর প্রভাব বেশি।

প্রভাবিত করে এমন কারণঃ

প্রথমত, কিছু কিছু খাবার রয়েছে- যা খাওয়ার পর মাইগ্রেনের ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায় বা হালকা ব্যথার ভাব থাকলে তা পরিপূর্ণ মাইগ্রেনের ব্যথায় রূপ লাভ করে। তার মাঝে নিম্নলিখিত খাবার উলেকযোগ্য :
(১) চকোলেট;
(২) পনির;
(৩) মদ্যপান;
(৪) কোলাজাতীয় পানীয়।
দ্বিতীয়ত, মাইগ্রেন রোগী কিন্তু পাশাপাশি সাইনাসসমূহের প্রদাহে ভুগছেন বা প্রচন্ড সর্দি কাশি বা ঠান্ডায় ভুগছেন; তাদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের ব্যথার প্রকোপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।

তৃতীয়ত, যখন প্রচন্ড গরম পড়ে এবং পরিবেশের অবস্থা ভ্যাপসা আকার ধারণ করে, তখন মাইগ্রেনের রোগীর মাথাব্যথার প্রকোপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে শীতকালে যদি ঠান্ডা বাতাস বেশি লাগে বা
কুয়াশা পরিবেষ্টিত অবস্থা বিরাজ করে তখন এর প্রকোপ আরো বেড়ে যায়।

প্রকারভেদঃ

মাইগ্রেন সাধারণভাবে তিন প্রকার হয়। যথা-
ক) মাইগ্রেন উইথ অরা বা ক্লাসিক মাইগ্রেন;
খ) মাইগ্রেন উইদ্যাউট অরা বা কমন মাইগ্রেন;
গ) মাইগ্রেন ভ্যারিয়্যান্স অ্যাটিপিক্যাল মাইগ্রেন।

মাইগ্রেনের লক্ষণঃ

অরা  বা প্রাক ইঙ্গিত মাইগ্রেন হচ্ছে মাইগ্রেন মাথাব্যথা শুরুর পূর্বের ত্রিশ মিনিটের মধ্যে কিছু বিশেষ অনুভূতির প্রমাণ।একটি মাইগ্রেন মাথাব্যথার আক্রমণকে কয়েক পর্যায়ে ভাগ করা যায়; (ক) প্রডরমাল (prodormal) বা প্রাকউপসর্গ যা মাথাব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পূর্বে লক্ষ্য করা যায়।
 (খ) অরা বা পূর্ব লক্ষণ যা মাথাব্যথা শুরুর পূর্ব মুহূর্তে হয়।
(গ) মূল মাথাব্যথা ।
(ঘ) পরবর্তী উপসর্গ বা পোস্টড্ররমাল পর্যায়ে যদিও অধিকাংশ রোগী একাধিক পর্যায়ে ভুগে থাকে। তবে কোনো একটি সময় রোগ নির্ণয়ের জন্যও অপরিহার্য নয়।

পূর্ব লক্ষণঃ

মাথাব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিন আগে শতকরা ৫০-৮০ ভাগ মাইগ্রেন রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু মানসিক, স্নায়বিক,অটোনমিক (autonomic) ও অন্যান্য লক্ষণ দেখা যায়। এদের কেউ কেউ বিষন্ন, উল্লসিত, ঝিমুনি, অতি সচেতন, অতি উৎসাহী কিংবা খিটখিটে, শান্ত ধীরগতিভাবে ভুগে থাকে। কারও মধ্যে বমি বমি ভাব, হাই ওঠা, ক্ষুধামন্দা, পিপাসা ইত্যাদি দেখা যায়। কখনও কখনও কিছু খাবার-এর প্রতি আগ্রহ দেখা যায়, যেগুলো সাধারণত খাওয়া হয় না। তবে অনেকেই এ লক্ষণগুলো বুঝতেই পারে না। পূর্ব লক্ষণগুলো মাইগ্রেন রোগের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরবর্তী লক্ষণঃ
মাইগ্রেন মাথাব্যথার পরবর্তী পর্যায়ে রোগী সাধারণত ক্লান্ত এবং অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন যেন বিশাল একটা শারীরিক পরিশ্রমের ধকল গেছে। উপরন্তু এ সময়ে তিনি কোনো কিছু মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করতে পারেন না। বমিবমি ভাব, খাদ্যে অরুচি, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা ইত্যাদি দু-একদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে এগুলো এতো তীব্র হয় না বলে চিকিৎসাও দরকার পড়ে না।

ক) Migrane with  Aura বা অরা-যুক্ত মাইগ্রেনের লক্ষণঃ

কমপক্ষে শতকরা পনেরো ভাগ মাইগ্রেন রোগী তাদের মাথাব্যথা শুরু হওয়ার আগে কিছু লক্ষণ অনুযায়ী আসন্ন মাথাব্যথার আক্রমণ বুঝতে পারে। সাধারণত এ রোগীরা মাথাব্যথা শুরুর পূর্বের আধাঘণ্টা সময়ের মধ্যে চোখে আলোর ঝলকানি, চোখেরসামনের কিছু অংশ অন্ধকার দেখা, রাস্তাঘাট উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা দেখা ইত্যাদি দেখতে পান। কোনো কোনো সময়ে রোগী শরীরের অংশ বিশেষ অনুভূতির অস্বাভাবিকতা অনুভব করেন। কারো কারো কিছুক্ষণের জন্য শরীরের অংশ বিশেষ অবশ, কথা বলার অস্বাভাবিকতাও হতে পারে।
খ) Migraine without Aura বা অরা-বিহীন মাইগ্রেনের লক্ষণঃ
এটাকে কমন মাইগ্রেনও বলা হয়। অরাযুক্ত মাইগ্রেন এর চেয়ে এর প্রকোপ অনেক বেশি। এ মাথাব্যথা ৪-৭২ ঘণ্টাব্যাপী হয় এবং কমপক্ষে নিচের যে কোনো দুটি লক্ষণ থাকতে পারে।
ক) চিন চিন বা দপ দপ করে ব্যথা; খ) অর্ধেক মাথায় ব্যথা; গ) বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া; ঘ) আলো ভীতি বা শব্দ ভীতি; ঙ) অতীতে এ ধরনের মাথাব্যথার কমপক্ষে পাঁচবার অভিজ্ঞতা ও কোনো মস্তিস্কের অভ্যন্তরীন রোগ না থাকা;

চিকিৎসাঃ

ক) সাধারণ চিকিৎসা
ক.১ যে সব খাবার মাইগ্রেনের ব্যথাকে ত্বরান্বিত করে সেসব খাবার পরিত্যাগ করা। (যা কারণসমূহের সাথে বর্ণনা করা হয়েছে)।
ক.২ যদি কোনো মহিলা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতে থাকেন, তবে তিনি বড়ি খাওয়া বন্ধ রাখবেন এবং অন্য যে কোনো প্রকার বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করবেন।
ক.৩ পরিবেশগত কারণে যদি ধোয়া বা ধূলাবালি বা প্রচণ্ড গরম বা শীতের বাতাসের মাঝে বের হতে হয় তবে মাস্ক বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
খ) শাস্ত্রীয় চিকিৎসা
খ.১ সাময়িকভাবে আক্রান্ত সাধারণ মাইগ্রেন রোগীর চিকিৎসা
খ.১.১ ট্যাবলেট অ্যাসপিরিন (৬০০-৯০০ মি.গ্রা.) যা পানিতে দ্রবণীয় অথবা ট্যাবলেট প্যারাসিটামল (১ গ্রাম বা ২টা ট্যাবলেট)
খ.১.২ সাথে বমি বন্ধ করার জন্য ওষুধ, যেমন-  Metoclopromide(মেটোকোপ্রোমাইড) বাজারে যা মোটিলন, নিউট্রামিড,অ্যান্টিমেট বা মেটোসিড নামে পরিচিত অথবা প্রোকোরপিরাজিন (prochlorperazine) বাজারে যা স্টিমিটিল, ভারগন বা প্রম্যাট নামে পাওয়া যায়- এসব দেয়া যেতে পারে।
গ) ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেনের চিকিৎসা
গ.১ প্রথমত:গ.১.১ আরগোটামিন টারট্রেট (Ergotamine Tartrate) ০.৫-১.০ মি.গ্রা. জিহ্বার নিচে, পায়ুপথে বা ইনহেলার বা শ্বাসের সাথে নিতে হবে ।
গ.১.২ মূলত এই চিকিৎসা তখনই দেয়া হয় যখন বেশি ব্যথার সাথে সাথে দৃষ্টিজনিত অসুবিধা বা স্নায়ুঘটিত সমস্যার লক্ষণ প্রকাশিত হয়।
গ.১.৩ ট্যাবলেট আরগোটামিন নিজেই বমি বমি ভাব বা বমির উদ্রেক করে যার ফলে বেশির ভাগ রোগীই এটাকে সহ্য করতে পারেন না। অপরপক্ষে অতিরিক্ত সেবনের ফলে ধমনী/ শিরাতে সংকুচিত ভাব প্রকাশ পায় ও পাশাপাশি মাথাব্যথাও শুরু হয়। যার ফলে এর ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে সপ্তাহে ১২ মি. গ্রা. এর মাত্রার বেশি মাত্রা না পড়ে। শুধু তাই নয়- নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে এর ব্যবহার

নিষিদ্ধ :

(১) গর্ভাবস্থায় (২)  ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ (IHD) (৩) প্রান্তীয় রক্তনালীর বিশৃঙ্খলতা (Peripheral Vascular Disease)
গ.২ দ্বিতীয়ত, সহসা আক্রান্ত মাইগ্রেনে সুমাট্রিপট্যান (sumatriptan যা ব্রেনের উপাদান সিরোটোনিন এর কাজের সহায়ক নূতন এক সংযোজজিত ওষুধ।
(১) মাত্রা : ১০০ মি.গ্রা. ২৪ ঘণ্টার মাঝে। অবশ্যই ল্য রাখতে হবে যাতে মাত্রা ৩০০ মি. গ্রা. এর উপরে না যায়। এটি ইনজেকশনের আকারেও পাওয়া যায়।৬ মি. গ্রা. চামড়ার নিচে। লক্ষণীয়; ২৪ ঘণ্টার মাঝে যেন দু’টির বেশি ইনজেকশন না পড়ে। এর কার্যকারিতা খুবই ভালো তবে খুব ব্যয়সাধ্য।
ঘ) ঘন ঘন আক্রান্ত বা সামাজিক কাজে ব্যবহৃত রোগীর ক্ষেত্রে রোগ নিবারক ওষুধ (prophylaxis) খেয়ে যেতে হবে। তখন উদ্দেশ্য হবে সময়ের উদ্ভুত পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাই তখন নিম্নোক্ত চিকিৎসাই শ্রেয়।
ঘ.১ ট্যাবলেট প্রপানোলোল ১০ মি. গ্রা. করে ৮ ঘণ্টা পর পর। ৪০-৮০ মি.গ্রা. পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে। (বাজারে কার্ডিনল,ইনডিভার, প্রপ্রানোল, এডলক হিসাবে পরিচিত)
ঘ.২ ট্যাবলেট পিজোটিফেন (pizotifen) ) ০.৫ মি.গ্রা. শুধু রাতে শোবার পূর্বে তবে
১.৫ মি.গ্রা. পর্যাপ্ত দেয়া যেতে পারে।
ঘ.৩ ট্যাবলেট অ্যামিট্রিপটাইলিন (১০-৫০ মি.গ্রা.) শুধুমাত্র রাতে শোবার পূর্বে।
(বাজারে অ্যামিট্রিল, সেরোনিল, অ্যামিট্রিনটাইলিন, ট্রিপটিন নামে পরিচিত)
ঘ.৪ ট্যাবলেট ফ্লুনারিজিন (Flunarizine) (১০-৫০ মি.গ্রা. করে প্রতিদিন খেলে মাইগ্রেনের তীব্রতা কমে আসে)।
ঘ.৫ এক্যুট অ্যাটাকের সময় ট্যাবলেট রিজাট্রিপটিন (Rizatryption—5mg) খেলে তৎণাৎ ব্যথা কমে যায়।
সম্প্রতি আমেরিকান ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন ‘স্টাডল’ নামে একটি ওষুধ তৈরি করেছে যা এ ব্যথার বিরুদ্ধে কার্যকরী।অপরদিকে ওহিরো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের একদল গবেষক চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে অনুমানের উপর ভিত্তি করেচিকিৎসা করার প্রয়োজন না পড়ে। উক্ত গবেষকরা শ্রেনিং টেস্টের কথা বলেছেন। এই টেস্টের ফলে ডাক্তাররা জানতে পারবেন ব্যথা কোথায় ঘটছে এবং কিভাবে রক্তবাহী শিরাগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মাথাধরার অন্যান্য কারণও এই টেস্টে জানা যাবে। ফলে চিকিৎসকরা সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।
লেখক: চিকিৎসক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ,বারডেম হাসপাতাল, শাহবাগ, ঢাকা

0 Comments